কাব্য ও অরিণার প্রেম

অধ্যায় ৫: গোপন রহস্য ও নিষেধাজ্ঞা

অধ্যায় ৫: গোপন রহস্য ও নিষেধাজ্ঞা

রাত তখন গভীরতর হয়েছে।

চাঁদ ডুবে যাচ্ছে, আকাশে মেঘ জমছে। প্রাসাদের চারপাশের হাওয়ায় অদ্ভুত একটা ভারি নীরবতা নেমে এল।

কাব্য আর অরিণা তখনও বারান্দায় দাঁড়িয়ে। তাদের চোখে চোখ, হাতে হাত—কিন্তু সেই মুহূর্তের প্রশান্তি হঠাৎ ভেঙে দিল দূরে বাজ পড়ার গর্জন।

অরিণার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। সে হঠাৎ গম্ভীর হয়ে উঠল, যেন ভিতরের এক গোপন ভয় তার চোখে ভেসে উঠেছে।

নিষিদ্ধ দরজা

অরিণা ধীরে ধীরে কাব্যকে প্রাসাদের ভেতরের এক অন্ধকার করিডোরে নিয়ে এল।

সেখানে বিশাল এক দরজা—পাহাড়ি পাথরে খোদাই করা, চারদিকে অদ্ভুত সব প্রতীক। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে থেমে গেল।

“কাব্য,” তার কণ্ঠে ছিল সতর্কতা, “এটা আমাদের রাজ্যের নিষিদ্ধ দরজা। এর ভেতরে এমন কিছু আছে, যা কোনো মানুষকে জানানো যায় না। তুমি যদি ভেতরে যাও, তুমি আর আগের মতো থাকবে না।”

কাব্যের চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল।

“কিন্তু কেন? এর ভেতরে কি আছে?”

অরিণা নিচের দিকে তাকাল। তার গলা কেঁপে উঠল।

“ওখানে আমাদের রাজ্যের অন্ধকার লুকানো। আলো আর অন্ধকার—দুটোই আমাদের ভেতরে আছে। কিন্তু মানুষ কেবল আলো দেখলে মুগ্ধ হয়, অন্ধকার দেখলে ভয় পায়। আমি চাই না তুমি ভয় পাও।”

কাব্য নরম স্বরে বলল—

“আমি ভয় পাই না। আমি সত্য জানতে চাই।”

অরিণা কাব্যের হাত শক্ত করে ধরল।

“তাহলে শোনো—তুমি আর আমি যত কাছেই আসি না কেন, তুমি কখনো এই দরজার ওপাশে যেতে পারবে না। এটা আমাদের নিয়ম, আমাদের অভিশাপ।”

প্রাচীন অভিশাপের গল্প

কাব্য স্তব্ধ হয়ে গেল।

অরিণা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানাতে শুরু করল—

“অনেক আগে আমাদের রাজ্য ছিল মানুষের মতোই। রাজা-রানী, সৈন্য, প্রজারা—সবকিছু ছিল। কিন্তু রাজ্যের একদল মানুষ জাদুবিদ্যা ব্যবহার করে অমরত্ব চাইতে গিয়ে অভিশপ্ত হয়ে গেল। তাদের অন্ধকার ইচ্ছে ধীরে ধীরে পুরো রাজ্যকে গ্রাস করল। তখন স্বর্গ থেকে দেবতারা এসে এই রাজ্যকে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিল।

শুধু কিছু মানুষ—যাদের হৃদয়ে সত্যিকারের ভালোবাসা ছিল—তারা আলো হয়ে বেঁচে রইল। তাদেরই আমরা বলি ‘পরী’।

কিন্তু অভিশপ্তদের আত্মা এখনও বেঁচে আছে। তারা ওই নিষিদ্ধ দরজার ভেতর বন্দী।”

কাব্যের বুক কেঁপে উঠল।

“মানে, তুমি আর তোমাদের সবাই… আসলে অভিশপ্ত রাজ্যের বেঁচে থাকা অংশ?”

অরিণা মাথা নিচু করল।

“হ্যাঁ। আমরা আলো, কিন্তু আমাদের ভেতরে অন্ধকারও লুকানো। তাই নিয়ম হলো—কোনো মানুষ এই অভিশপ্ত রাজ্যের সঙ্গে বেশি জড়িয়ে পড়তে পারবে না। নইলে সেই অন্ধকার তাকে গ্রাস করবে।”

প্রেমের দ্বন্দ্ব

কাব্য হঠাৎ যেন বুঝতে পারল—তার ভালোবাসা কোনো সাধারণ ভালোবাসা নয়।

এটা এমন এক প্রেম, যার পেছনে আছে অজস্র ভয়, বিপদ আর নিষেধাজ্ঞা।

সে অরিণার হাত ধরে বলল—

“তাহলে তুমি চাইছো আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাই?”

অরিণার চোখ ভিজে উঠল।

“না… আমি চাই তুমি থাকো। কিন্তু আমি জানি, তোমার জন্য এটা বিপদজনক।”

কাব্যের কণ্ঠ শক্ত হলো।

“শোনো অরিণা—আমি সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছি, তবু সবসময় মনে হয়েছে কিছু একটা অপূর্ণ। আজ তোমাকে পেয়ে আমি সেই শূন্যতা পূর্ণ হতে দেখছি। আমি যদি এই আলোকে আঁকড়ে ধরতে গিয়ে অন্ধকারে ডুবে যাই—তবু আমি পিছিয়ে যাব না।”

অরিণার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।

সে ফিসফিস করে বলল—

“তুমি জানো না তুমি কী বলছো, কাব্য। এই ভালোবাসা তোমাকে হয়তো জীবন দেবে, আবার হয়তো কেড়ে নেবে সবকিছু।”

নিষিদ্ধ চুম্বন

কথাগুলো শেষ হওয়ার আগেই হঠাৎ এক ঝড়ের হাওয়া বইল।

দরজার ভেতর থেকে অদ্ভুত গুঞ্জন শোনা গেল, যেন শত শত কণ্ঠ একসাথে ফিসফিস করছে।

কাব্য ভয়ে কেঁপে উঠল, কিন্তু অরিণা তার মুখ দু’হাতে ধরে রাখল।

তার ঠোঁটে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা।

“মনে রেখো—তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো, তবে ভয় পেও না।”

বলেই সে কাব্যের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট রাখল।

সে চুম্বনে কাব্যের শরীর কেঁপে উঠল, যেন আগুন আর বরফ একসাথে তার শিরায় বয়ে যাচ্ছে।

চারপাশে ঝড়, দরজার গর্জন, অন্ধকারের ডাক—সব মিলেমিশে যাচ্ছিল।

কিন্তু সেই চুম্বনের ভেতরে কাব্য অনুভব করল, পৃথিবীর সবচেয়ে নিষিদ্ধ অথচ সবচেয়ে সত্য ভালোবাসা।

সংযুক্ত ব্যাকলিংক

গল্পের আরও পড়ুন: কাব্য ও অরিণার প্রেম | পরীর রাজপ্রাসাদ

— রূপম

© 2025 ছায়া আলো – অনুমতি ছাড়া কপি বা পুনঃপ্রকাশ করা নিষিদ্ধ ❌

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ