কাব্য ও অরিণার প্রেম

কাব্য ও অরিণার প্রেম: অধ্যায় ৬ & ৭ – ছায়া আলো

কাব্য ও অরিণার প্রেম

অধ্যায় ৬: বাস্তবের টানাপোড়েন

রাত গভীর। চাঁদ আকাশে উঠে আছে, তার আলো প্রাসাদের সাদা দেয়ালকে রূপালি করে দিয়েছে। ঝরনার স্রোত এখন নীরব, ফোয়ারার পানি ঝলমল করে মৃদু সুর বাজাচ্ছে। কিন্তু কাব্যের মনে কোনো প্রশান্তি নেই। সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে অরিণার ছবি ভেসে উঠছে—রূপালি চুল, চোখের গভীরতা, ধীরে ধীরে হাঁটার ছন্দ। আর সেই সঙ্গে ভেসে আসছে তার বাস্তব পৃথিবীর স্মৃতি—নোয়াখালীর সুনসান রাত, গাড়ি চালানোর ক্লান্তি, শহরের আলো, কফি হাউসের মানুষদের হাসি। কাব্যের বুকের ভেতর অদ্ভুত দ্বন্দ্ব। একদিকে আছে অরিণা—পরীর আলো, নিষিদ্ধ প্রেম, এক নতুন পৃথিবী। অন্যদিকে আছে বাস্তব—ভ্রমণ, স্মৃতি, পৃথিবীর জীবনের ঝকঝকে শব্দ, পরিচিত মানুষের সঙ্গ। সে জানে, যদি এই রাজ্যে থাকে, তাহলে পৃথিবীর সঙ্গে তার সংযোগ ছিন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু যদি ফিরে যায়, তাহলে অরিণার চোখের দীপ্তি, রাজ্যের আলো, সেই নিষিদ্ধ ভালোবাসা—সব হারাবে।

স্দ্বন্দ্বের গভীরতা:

কাব্য ধীরে ধীরে বলল— “অরিণা, আমি চাই তোমার কাছে থাকি। কিন্তু আমার পৃথিবীও আছে। আমি কি দু’টি জগৎ একসাথে বাঁচাতে পারব?” অরিণার চোখে মৃদু করুণার ছায়া। “কাব্য, তুমি জানো না। এই প্রেম সহজ নয়। তুমি যদি পুরোপুরি আমাদের জগতে প্রবেশ কর, তাহলে বাস্তবের কোনো অংশ তুমি আর ফিরে পাবে না। আর যদি ফিরে যাও, তাহলে তোমার হৃদয় কিছুটা টুকরো হয়ে থাকবে—আমাদের আলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে।” কাব্য নরম স্বরে বলল— “আমি ভয় পাই… কিন্তু আমি চাই না এই অনুভূতিটা হারাই।” অরিণার চোখ ভিজে উঠল। “এটাই আমাদের সীমা। ভালোবাসা ও স্বাধীনতার মধ্যে তুমি টানাপোড়েনে পড়েছ। তুমি যা বেছে নেবে, সেটাই হবে তোমার নতুন জীবন।” কাব্যের মন ব্যথায় কেঁপে উঠল। সে ভাবল—একটা মানুষ কখনো প্রেমের জন্য এমন দ্বন্দ্বে পড়তে পারে কি না। যে ভালোবাসা এত সুন্দর, অথচ এত নিষিদ্ধ।

স্মৃতির ভেতরে ভ্রমণ:

কাব্য বারান্দায় বসে চোখ বন্ধ করে মনে পড়ল তার ভ্রমণ— নোয়াখালী থেকে বান্দরবান পর্যন্ত রাতের অন্ধকারে একা গাড়ি চালানো। পাহাড়ের পথে হঠাৎ হাওয়া, ঝরনার শব্দ, মেয়েদের হাসির ভুতি, চোখে মুখে পানি দেওয়া—সব মনে পড়ে। সেই ক্লান্ত রাত, নিঃশব্দ অরণ্য, চাঁদের আলো—সব মিলে এক স্বপ্নের মতো অনুভূতি দিয়েছে। তার ভেতরে বয়ে যাচ্ছে অদ্ভুত এক ধারা—প্রকৃতির প্রশান্তি, মানুষের সংস্পর্শ, এবং অরিণার আলো। সে বুঝল—ভালোবাসা শুধু মানুষের জন্য নয়। এটা পৃথিবীর সঙ্গে সংযোগ, অন্ধকারে আলো খুঁজে পাওয়া।

একটি সিদ্ধান্তের মুহূর্ত:
কাব্য অরিণার দিকে তাকাল। “আমি যদি তোমার সঙ্গে থাকি, তবে কি আমি কখনো আমার পৃথিবী ভুলে যাব?” অরিণা তার হাতে হাত রেখে বলল— “তোমার পৃথিবীর অংশ থাকবে, কিন্তু তুমি আর আগের মতো থাকবে না। তোমার হৃদয় এক নতুন জগতে প্রবেশ করবে। আমরা একসাথে থাকব, কিন্তু সেই সঙ্গে তোমার স্বপ্ন আর বাস্তবের সংযোগও থাকবে।” কাব্য শ্বাস ফেলল। সে বুঝল—প্রেম কখনো সহজ হয় না। এটি পরীক্ষা নেবে, ভয় জাগাবে, কিন্তু হৃদয় পূর্ণ করবে।

চূড়ান্ত টানাপোড়েন
কাব্যর চোখে জল। “আমি… আমি চাই তোমার পাশে থাকি। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি—ভয়, যে যদি এই ভালোবাসা আমাকে ভেঙে দেয়।” অরিণা তার হাত শক্ত করে ধরে বলল— “ভয়কে চিহ্নিত করো, কিন্তু দারুণ ভালোবাসার জন্য সেই ভয়কে মুছে দাও। আমরা একসাথে থাকব, যতদিন আলো আছে।” কাব্য হঠাৎ বুঝল—ভালোবাসা কেবল আনন্দ নয়। এটি দ্বন্দ্ব, এটি পরীক্ষা, এটি স্বাধীনতা। আর সে জানল—এই প্রেম ছাড়া তার জীবন কখনো পূর্ণ হবে না।

শনিষিদ্ধ চুম্বন:

হঠাৎ ঝরনার ধ্বনি আরও জোরে বাজতে লাগল। বাতাস বইছে ঝকঝকে, অন্ধকারে অদ্ভুত ছায়া ভেসে যাচ্ছে। অরিণা হঠাৎ কাব্যের মুখের কাছে এসে বলল— “শোনো, তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো, ভয় পেও না।” বলেই সে কাব্যের ঠোঁটে চুম্বন রাখল। কাব্য অনুভব করল—আগুন আর বরফ একসাথে তার শিরায় বয়ে যাচ্ছে। প্রেম, ভয়, উষ্ণতা, ঠান্ডা—সব একসাথে। আর সেই চুম্বনেই শুরু হলো তার জীবনের সবচেয়ে নিষিদ্ধ, কিন্তু সবচেয়ে সত্য প্রেম।

অধ্যায় ৭: আলো ও অন্ধকারের মিলন

সূর্য ধীরে ধীরে পূর্ব পাহাড়ের চূড়ায় উঠছে। প্রাসাদের চারপাশে ঘন কুয়াশা এখনও ভেসে বেড়াচ্ছে। ঝরনার পানি হালকা সাদা কুয়াশার মধ্যে উজ্জ্বল ঝলক দেখাচ্ছে, আর ফুলের বাগান আজ যেন রাতের স্বপ্ন থেকে জেগে উঠেছে—রঙিন এবং সুগন্ধে ভরা। কাব্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছে অরিণা পাশে। তার চোখে এক অদ্ভুত দীপ্তি—কেবল ভালোবাসা নয়, বরং সেই আলো, যা রাতের অন্ধকারকে ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু কাব্যের মনে এখনো এক অদ্ভুত টানাপোড়েন। অরিণার হাত ধরে সে ভাবছে—ভালোবাসা কি সত্যিই এই জগতে পূর্ণ? যে জগৎ কেবল আলো দেখাতে চায়, যেখানে অন্ধকারে প্রবেশ নিষিদ্ধ।

কাব্য গভীর শ্বাস নিল। সে জানে—প্রেম শুধুমাত্র অনুভূতি নয়। এটি সাহস, আত্মত্যাগ, এবং অন্তর্দ্বন্দ্বের মেলবন্ধন। হঠাৎ অরিণা তাকে প্রাসাদের ভেতরের গোপন বারান্দায় নিয়ে গেল। সেখানে দরজা বন্ধ, কিন্তু বাতাসে অদ্ভুত আলোর ঝলক। অরিণা হাত বাড়িয়ে দরজার দিকে দেখাল। “এই দরজা আমাদের রাজ্যের অন্তর। এখানে অন্ধকারও বাস করে, কিন্তু একসাথে আলোও।

অরিণার হাত ধরে সে ভাবছে—ভালোবাসা কি সত্যিই এই জগতে পূর্ণ? যে জগৎ কেবল আলো দেখাতে চায়, যেখানে অন্ধকারে প্রবেশ নিষিদ্ধ।

আলো আর অন্ধকারের প্রথম মিলন:
অরিণা কাব্যের দিকে তাকিয়ে বলল—
“কাব্য, তুমি জানো না। আমাদের রাজ্যে আলো এবং অন্ধকার একসাথে বাঁচে। যদি তুমি সত্যিই আমাদের জগতে প্রবেশ কর, তুমি দেখতে পারবে—ভালোবাসা শুধুই আনন্দ নয়। এটি পরীক্ষা, বেদনাও বয়ে আনে।”

কাব্য গভীর শ্বাস নিল। সে জানে—প্রেম শুধুমাত্র অনুভূতি নয়। এটি সাহস, আত্মত্যাগ, এবং অন্তর্দ্বন্দ্বের মেলবন্ধন।

রাজ্যের রহস্য উন্মোচিত:
দরজা ধীরে ধীরে খোলা হলো। ভেতরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে কাব্য অনুভব করল—একটি নতুন জগৎ, যেখানে আলো আর অন্ধকার একসাথে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝরনার পানি হঠাৎ রূপালি স্রোত হয়ে ভেসে যাচ্ছে, আর বাতাসে হালকা সুর শোনা যাচ্ছে—যেন নরক এবং স্বর্গ একসাথে গান গাইছে। কাব্যর চোখ বড় হয়ে গেল। তিনি দেখল—অন্ধকারের ভেতরও আলো আছে। কিন্তু আলো শুধু নেই, এটি জ্বলছে মানুষের ভালবাসা থেকে। অন্ধকার মানে ভয় নয়, বরং এটি হলো পরীক্ষা, যা সত্যিকারের ভালোবাসাকে শক্তিশালী করে। অরিণা কাব্যের হাতে হাত রাখল। “এই আলো আর অন্ধকার একসাথে মিলিত হয়। আমাদের রাজ্যের নিয়ম হলো—যারা একে বেছে নেয়, তারা সত্যিকারের প্রেমের অংশ হয়ে যায়।” কাব্য ধীরে ধীরে বুঝতে লাগল—যে ভালোবাসা এত নিষিদ্ধ, তা কেবল দৃঢ় হৃদয়ই ধরে রাখতে পারে।

প্রথম সম্পূর্ণ মিলন:
কাব্য ও অরিণা দরজার ভেতরে দাঁড়িয়ে একসাথে তাকালো। একসাথে তারা অনুভব করল—প্রেম কেবল একরঙা নয়। এটি একটি জটিল মেলবন্ধন—আনন্দ, বেদনা, ভয়, সাহস, প্রত্যাশা—সব একসাথে। অরিণা কাব্যের দিকে ঝুঁকল। “চল, আমরা একসাথে এই অন্ধকার আর আলোকে বরণ করি। কেউ আমাদের বিরক্ত করতে পারবে না। আমরা একসাথে থাকব।” কাব্য চোখ বন্ধ করে তার হাত শক্ত করে ধরল। তার মনে এক নতুন শক্তি জন্মালো—ভালোবাসার সাহস, যা বাস্তব আর রাজ্যের মধ্যে তার পথ আলোকিত করবে। হঠাৎ দরজা থেকে ঝকঝকে আলো ভেসে এলো, আর কাব্য বুঝল—এটি শুধু প্রেম নয়। এটি একটি নতুন জীবনের শুরু, যেখানে সে অরিণার সঙ্গে চিরকাল থাকবে।

শেষ দৃশ্য:
প্রাসাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাব্য আর অরিণা দেখল—পাহাড়ের চূড়ায় সূর্য উঠে আসছে। ঝরনা উজ্জ্বল, ফোয়ারার পানি ঝলমল করছে, বাতাসে ফুলের গন্ধ ভাসছে। কাব্য অনুভব করল—প্রেম, সাহস, আলো ও অন্ধকার একসাথে মিলেছে। অরিণা কাব্যের চোখে চোখ মিলিয়ে বলল—
“এটাই আমাদের জগৎ। তুমি এখন শুধু ভ্রমণকারী নও। তুমি অংশ হয়ে গেছ আমাদের গল্পের।”

— writer রূপম

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ